উরস বা যিয়ারত উপলক্ষে সফরের প্রমাণ
মকসুদ অনুযায়ী সফরের হুকুম র্বতায় । অর্থাৎ হারাম কাজের জন্য সফর করা হারাম। জায়েজ কাজের জন্য জায়েজ, সুন্নাত কাজের জন্য সুন্নাত। এবং ফরজ কাজের জন্য ফরজ । যেমন ফরজ হজ্বের জন্য সফর করাও ফরজ । মাঝে মধ্যে জিহাদ ও বাণ্যিজের জণ্য সফর করা সুন্নাত কেননা এ কাজ সুন্নাত । হুযূর আলাইহিস সালামের রওযা পাক যিয়ারতের উদ্দ্যেশ সফর করা ওয়াজিব কেননা এ যিয়ারত ওয়াজিব । বন্ধু-বান্ধবের সাথে দেখা সাক্ষাত আত্নীয়-স্বজনের বিবাহ শাদী খতনা ইত্যাদি অনুষ্ঠানের যোগদান এবং চিকিৎসার জন্য সফর করা জায়েয । কেননা এগুলোজায়েয কাজ। চুরি-ডাকাতির জন্য সফর করা হারাম । মোট কথা হলো, সফরের হুকুমটা জানতে হলে, প্রথমে এর মকসুদটা জেনে নিতে হবে । মুলত: কবর যিয়ারত হচ্ছে সুন্নাত । সুতরাং কবর যিয়ারতে জন্য সফর করাটাও সুন্নাত বলে বিবেচ্য হবে । কুরআন করীমে অনেক ধরনের সফর প্রমানিত আছে-
হিজরত উপলক্ষে সফর প্রমানিত হলো।وَمَنْ يُّخْرُجُ مِنْ بَيْتِهِ مُهَاجًرا اِلَى اللهِ وَرَسُوْلِهِ ثُمَّ يُدْرِكْهُالْمَوْتُ فَقَدْ وَقَعَ اَجْرُه‘عَلَى اللهِ
যে ব্যক্তি আল্লাহ ও রসূলের উদ্দেশ্য নিজ গৃহ থেকে মুহাজির হয়ে বের হলো এবং (পথে) তার মৃত্যু ঘটলো, তার পুরষ্কার আল্লাহর কাছে অবধারিত হয়ে গেল ।
এ আয়াতে বাণ্যিজের উদ্দেশের সফর প্রমাণিত হলো ।لِاِيْلَفِ قُرَيْشٍ اِلَفِهِمْرِ حْلَةَ الشِّتَاءِ وَالصَّيْفِ.
যেহেতু কুরাইশের আসক্তি আছে । আসক্তি আছে তাদের শীত ও গ্রীষ্মে সফরের ।
এতে মাশায়েখের সাথে দেখা করার উদ্দেশ্য সফর প্রমানিত হলো।اِذْ قَالَ مُوْسَى لِفَتَاهُ لَااَبْرَحُ حَتَّى اَبْلُغَ مَجْمَعَ الْبَحْرَيْنِ اَوْ اَمْضِىَ حُقُبَا.
স্বরন করুন যখন মুসা (আ:) নিজের খাদিমকে বললেন- আমি ততক্ষন র্পযন্ত বিরত হবো না, যতক্ষন না সেখানে পৌছাব যেথায় দু’টি সমুদ্র মিলিত হয়েছে। হযরত মুসা (আ:) হযরত খিযির (আ:) এর সাথে সাক্ষাত করার জন্য তথায় গিয়েছিলেন।
হযরত ইয়াকুব (আ:) তাঁর অন্যান্য সন্তানদেরকে হযরত ইউসুফ (আ:) এর সন্ধানের নির্দেশ দিয়েছিলেন। অতএব প্রিয়জনদের সন্ধানে সফর করা প্রমাণিত হলো। হযরত ইউসুফ আ: বলেছেন -يَا بُنَىَّ اِذَهَبُوْا فَتَحَسَّسُوْا مِنْ يُّوْسَفَ وَاَخِيْهِ وَلَاتَيْئَسُوْا مِنْ رُّوْحِ اللهِ
হে আমার পুত্রগন, ইউসুফ ও তার ভাইয়ের অনুসন্ধান কর এবং আল্লাহর রহমত হতে নিরাশ হইও না
চিকিৎসার জন্য সফর প্রমাণিত হলো ।اِذْهَبُوْا بِقَمِيْصِىْ هَذَا فَاَلْقُوْهُ عَلَى وَجْهِ اَبِىْ يَاتِ بَصِيْرًا.
আমার এ কোর্তাটা নিয়ে যাও; আমার আব্বার মুখের উপর রাখিও তার চোখ খুলে যাবে ।
ছেলে মেয়েদের সাথে দেখা করার জন্য সফর প্রমানিত হলো । হযরত ইয়াকুব আলাইহিস সালামের ছেলেরা বাপের কাছে আরয করলেন-অতঃপর যখন তারা সবাই হযরত ইউসুফ (আ:) এর কাছে পৌছলেন, তখন তিনি স্বীয় মা-বাবাকে নিজের পাসে বৈঠক দিলেন ।
উর্পাজনের জন্য সফর প্রমানিত হলো ।فَاَرْسِلْ مَعْنَ اَخَانَا نَكْتَلُ وَاِنَّالَهُ لَحَفِظَوْنَ.
আমাদের ভাইকে আমাদের সাথে দিন । আমরা খাদ্যশস্য নিয়ে আসবো এবং তাকে নিশ্চয় হিফাজত করবো ।
হযরত মুসা (আ:) কে নির্দেশ দেয়া হলো ।
তবলীগের জন্য সফর প্রমাণীত হলো। মিসকাত শরীফের কিতাবুল ইলমে বর্নিত আছে ।اِذْهَبْ اِلَى فِرْ عَوْنَ اِنَّهُ طَغَى.
ফিরাওনের কাছে যাও, কারন সে বিদ্রোহী হয়ে গেছে ।
আর একটি হাদিছে বর্ণিত আছে -مَنْ خَرَجَ فِىْ طَلَبِ الْعِلْمِ فَهُوَ فِىْ سَبِيْلِ اللهِ
যে ব্যক্তি জ্ঞান অর্জনের জন্য বের হলো সে আল্লাহর পথে আছে ।
اُطْلُبُوا الْعِلْمَ وَلَوْ كَانَ بِالصِّيْنِ
জ্ঞান অর্জন কর, যদি চীনেও যেতে হয় ।
প্রসিদ্ধ ফার্সী পুস্তিকা করীমাতে আছে -
জ্ঞানানুসন্ধান জন্য সফর প্রমাণিত হলো । প্রখ্যাত ফার্সী কাব্যগ্রস্থ গুলিস্তায় উল্লেখিত আছে-طلب كردن علم شد برتوفرض
دگرواجباست از ب پيش فطع ارض.
জ্ঞান অনুসন্ধান করা তোমার জন্য ফরয এর জন্য সফরের প্রয়োজন আছে ।
ভ্রমনের জন্য সফর প্রমাণিত হলো । কুরআন করিমে বর্ণিতআছে-برواندر جهان تفرج كن – پيش ازان روز كزجهان بروى.
মৃতুর আগে পৃথিবীটা একবার পরিভ্রমন করে দেখ ।
قُلْ سِيْرُوْا فِى الْاَرْضِ فَانْظُرُوْا كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ اَلْمُكَذِّبِيْنَ.
তাঁদেরকে বলুন, পৃথিবীটা ভ্রমন কর এবং কাফিরদের কি পরিণাম হয়েছে, তা দেখ
যেসব দেশে খোদায়ী গজব নাযিল হয়েছে, ওগুলো দেখে সতর্ক হওয়ার জন্য সফর প্রমাণিত হলো । যখন এত রকম সফর প্রমাণিত হলো তাহলে আওলিয়া কিরামের মাজার যিয়ারত উপলক্ষে সফর এমনিই প্রমাণিত বলে ধরে নেয়া যায়। আওলিয়া কিরাম বলেন, রূহানী ডাক্তার এবং ওনাদের ফয়েযও ভিন্ন ভিন্ন । ওনাদের মাজারে গেলে খোদার শান চোখের সামনে ভেসে উঠে । খোদা প্রাপ্তগন মৃত্যুর পরও দুনিয়াতে বিরাজ করেন, এ দ্বারা ইবাদাতের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হয় । আর ওনাদের মাযারসমূহে দুআ সহসা কবুল হয়। ফতওয়ায়ে শামী প্রথম খন্ড যিয়ারতে কুবুর’ শীর্ষক আলোচনায় উল্লেখিত আছে -
একই জায়গায় শামীতে আরও উল্লেখিত আছে-وَهَلْ تَنْدَبُ الرَّحْلَةُ لَهَا كَمَا اعْتِيْدَ مِنْالرَّحْلَةِ اِلَى زِيَارَةِ خَلِيْلُ الرَّ حْمَنِ وَزِيَارَةِ السَّيَّدِ لْبَدْوِىْ لَمْ اَرَمَنْ صَرَّحَ بِهِ مِنْ اَئِمَّتِنْا وَمَنَعَ مِنْهُ بَعْضُ الْاَئِمَّةِ الشَّاَفِعِيَّةِ قِيَاسًا عَلَى مَنْعِ الرِّحْلَةِ بِغَيْرِ الْمُسْجِدِ الثَّلَثِ وَرَدَّهُ الْغَزَ الِىُّ بِوُصُوْحِ الفَرْقِ
কবর যিয়ারত উপলক্ষে সফর করা মুস্তাহাব । যেমন আজকাল হযরত খলিলুর রহমান ও হযরত ছৈয়দ বদ্দবী (রহ:) এর মাযার যিয়ারতের জন্য সফর করা হয় আমি এ ক্ষেত্রে আমাদের ইমাদের কারো ব্যাখ্যা দখিনি । তবে শাফেই মাযহাবের কয়েকজন আলেম তিন মসজিদ ভিন্ন সফর নিষেদ -এ হাদিছের উপর অনুমান করে নিষেদ বলেছেন। কিন্তু ইমাম গাযযালী (রহ) এ নিষেধাজ্ঞাকে খন্টন করেছেন এবং পার্থক্যটা বিশ্লেষন করে দিয়েছেন
ফতুওয়ায়ে শামীর ভূমিকায় ইমাম আবু হানিফা (রহ:) এর ফজিলত বর্ণনা প্রসংগে ইমাম শাফেঈ (রহ:) এর উক্তিটি উল্লেখ করা হয়েছ ।وَاَمَّا الْاَوْلِيَاءُ فَاِنَّهُمْ مُتَفاوِتُوْنَ فِى القُرْبِ اِلَى اللهِ وَنَفَعِ الزئريْنَ بِحَسْبِ مَعَارِفِهِمْ وَاَسْرَارِهِمْ.
কিন্তু আল্লাহর ওলীগন আল্লাহর নৈকট্য লাভে ও যিয়ারতকারীদের ফায়দা পৌছানোর বেলায় নিজেদের প্রসিদ্ধি ও আধ্যাত্নিক শক্তি অনুসারে ভিন্নতর ।
اِنِّىْ لَا تَبَرَّكُ بِاَبِىْ حَنِيْفَةَ وَاَجِئُ اِلَى قَبْرِهِ فَاذَا عَرَضَتْ لِىْ حَاجَّةٌ صَلَّيْتُ رَكْعَتَيْنِ وَسَالْتَ اللهِ عِنْدَ قَبْرِهِ فَتُقْضَى سَرِيْعًا.
আমি ইমাম আবু হানিফা থেকে বরকত হাসিল করি এবং তাঁর মাযারে আসি । আমার কোন সমস্যা দেখা দিলে, প্রথমে দু’রাকাত নামায পড়ি । অতঃপর তাঁর মাযারে গিয়ে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, তখন সহসা আমার সমস্যার সমাধান হয়ে যায় ।
উপরোক্ত বক্তব্য থেকে কয়েকটি বিষয় জানা গেল-কবর যিয়ারতের জন্য সফর কেননা ইমাম শাফেঈ (রহঃ) নিজের জন্ম ভূমি ফিলিস্তিন থেকে ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) এ মাযার যিয়ারত করার উদ্দেশ্যে সুদূর বাগদাদ শরীফ আসতেন, কবরবাসীদের থেকে বরকত গ্রহণ ওনাদের মাযারের কাছে গিয়ে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা এবং কবরবাসীদের অভাব পূর্ণ করার মাধ্যম মনে করা । অধিকন্তু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামের রওযা পাক যিয়ারতের জন্য সফর করা আবশ্যক ফতওয়ায়ে রাশিদীয়া প্রথম খণ্ড আরবী كتاب الخطر والاباحت এর ৫৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখিত আছে
বুযুর্গানে কিরামের যিয়ারতের জন্য সফর করা প্রসংগে উলামায়ে আহলে সুন্নাতের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। কেউ কেউ জায়েয বলেন এবং কেউ কেউ নাজায়েয বলেন । কিন্তু উভয় পক্ষের আলিমগণ হচ্ছে আহলে সুন্নাতের অনুসারী । বিতর্কিত মাসআলা নিয়ে বাড়াবাড়ি ঠিক নয় । আর আমাদের মত ইমামের অনুসারীদের পক্ষ থেকে সমাধান দেওয়াও অসম্ভব
— রশীদ আহমদ
এখন আর উরস উপলক্ষে সফর করতে কাউকে নিষেধ করার কোন অধিকার দেওবন্দীদের নেই । কেননা মৌলভী রশীদ বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করেছেন এবং এর কোন সিদ্ধান্তও দেননি । বিবেকও বলে যে যিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর জায়েয হওয়া চাই । কেননা আমি ইতিপূর্বে উল্লেখ করেছি যে সফর হালাল বা হারাম হওয়াটা এর মকসুদ থেকেই বোঝা যায়। এ সফরের উদ্দেশ্য হচ্ছে কবর যিয়ারত যা নিষেধ নয় , কেননা যিয়ারতে কবর সাধারণভাবেই অনুমোদিত الَافَزُوْرَوْهَا তাহলে সফর কেন হারাম হবে ? অধিকন্তু দ্বীনি ও দুনিয়াবী কাজ কারবারের জন্য সফর করা হয় । এটাও একটি দ্বীনি কাজের জন্য সফর হেতু হারাম কেন হবে ?
তথ্যসূত্র
- জা’আল হক ২য় খন্ড
- madina24.com