যারা কবর আজাব থেকে নিরাপদে থাকবেন
মহানবী (স) বলেছেন,
মৃত ব্যাক্তিকে দাফন করার পর লোকেরা যখন কবরস্থান থেকে চলে আসে , তখন সে তাঁদের পথ চলার জুতার শব্দ শুনতে পায় । সে মুমিন হলে তাঁর নামাজ এসে তখন শিওরে দাড়ায় । তাঁর রোজা এসে তাঁর ডান দিকে দাঁড়ায় এবং যাকাত এসে দাঁড়ায় বাম দিকে । আর সে যত নফল কাজ করেছে , যেমন নফল নামাজ , দান সদকা ও সৌজন্যমুলক আচরন ইত্তাদি কাজ গুলো তাঁর পদ যুগলের কাছে এসে দাঁড়ায় । তাঁর শিওরের দিক দিয়ে আজাবের আগমন ঘটলে , তাঁর নামাজ বলে ওঠে আমার দিক দিয়ে তোমার যাবার কোন পথ নেই । অতঃপর আজাব মৃত ব্যাক্তির ডান দিক থেকে আসার চেষ্টা করলে তাঁর রোজা বলে ওঠে, আমার দিক দিয়ে তোমার কোন পথ নেই । অতঃপর বাম দিক দিয়ে আসার চেষ্টা করলে , তাঁর দেয়া যাকাত দণ্ডায়মান হয়ে বলে আমার দিক দিয়ে তোমার যাবার কোন পথ নেই । অবশেষে পদযুগলের দিক দিয়ে আজাব আসতে শুরু করলে তাঁর নফল এবাদত সমুহ বলে আমাদের দিক দিয়ে তোমার কোন পথ নেই ।
— তারগিব , তারহিব , তাবারানি , ইবনে হেব্বান
Contents
সুরা মূলক ও সুরা সেজদা পাঠকারীর অবস্থা
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) বলেছেন
রাসুলুল্লাহ (সঃ) এর জনৈক সাহাবী কোন এক কবরের ওপর তাবু স্থাপন করলেন । তাঁর জানা ছিল না যে সেখানে কবর রয়েছে । তিনি তাবুর অভ্যন্তরে বসা ছিলেন । এমনি সময় হঠাৎ তিনি ভুতলে জনৈক ব্যক্তির কোরআন মজিদের সুরা মূলক পাঠের কণ্ঠ শুনলেন । সে সমস্ত সূরাটি পাঠ করলেন । এই ঘটনা নবী করীম (সঃ) কে অবগত করা হলে তিনি বললেন , “এই সুরা কবরের আজাবকে বাধা দান করে , আর ওই লোককে আল্লাহ্র শাস্তি হতে নিরাপদ রাখছে ।
— তিরমিজি শরীফ
হযরত আবু হোরায়রা (রা) বর্ণনা করেন , রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন , “কোরআন মজিদে এমন একটি সুরা রয়েছে , যার আয়াত সংখ্যা হচ্ছে তিরিশ । সে সুরাটি কারো জন্য আল্লাহ্র কাছে সুপারিশ করলে আল্লাহ্ তায়ালা তাঁকে ক্ষমা করে দেন । সে সূরাটি হচ্ছে সুরা মূলক । ( অর্থাৎ তাবা-রাকাল্লাজি বি ইয়া দী হিল মূলক
— – তিরমিজি,আবু দাউদ
হযরত খালেক ইবনে মাদান (র) সুরা মূলক ও সুরা আলিফ লাম মিম সেজদা প্রসঙ্গে বলতেন, এই সুরা দুটি কবরে তাঁর পাঠক দের পক্ষ নিয়ে আল্লাহ্ তায়ালার সাথে বিতর্কে লিপ্ত হয় । তাঁরা প্রত্যেকেই আল্লাহ্ তা'আলার কাছে বলে , “হে আল্লাহ্ ! আমি যদি তোমার কিতাবের কালাম না হয়ে থাকি তাহলে আমাকে তোমার কিতাব হতে বিলিন করে দাও । “খালেদ ইবনে মাদান (র) আরও বলতেন , এই সুরা দ্বয় পাখির ন্যায় ডানা মেলে তাঁর পাঠককে ধাকে রাখে , কবর আজাব থেকে রক্ষা করে ।
— দারেমি , মেশকাত
উপরোক্ত বর্ণনা দ্বারা প্রতীয়মান হল যে , এ সুরা দুটি পাঠের ফলে , কবর আজাব থেকে রক্ষা পাওয়া যায় । অন্য এক হাদিসে আছে ,
নবী করীম (সঃ) শয্যায় এ দুটি সুরা পাঠ করা ছাড়া নিদ্রা যেতেন না ।
— তিরমিজি শরীফ
পেটের অসুস্থতায় মৃত্যু হলে
হযরত সোলায়মান ইবনে মুরাদ (রা) বলেন , রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন , পেটের অসুস্থতায় যার মৃত্যু হয় কবরে তাঁকে শাস্তি দেয়া হবে না ।. তিরমিজি শরীফ , আহমদ
পেটের অসুস্থতা নানা ধরনের হতে পারে , তার কোন একটিতে মৃত্যু হলে কবরে তাঁকে শাস্তি দেয়া হবে না । হাদিসের এই বক্তব্যের মধ্যে পেট সংক্রান্ত যাবতীয় অসুস্থতাই শামিল ।যেমন কলেরা , বমি পেট বেদনা ইত্যাদি ।
জুম্মার দিনে বা রাতে মৃত্যু হলে
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা) বলেন , রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন , “কোন মুসলমান ম্যক্তির জুম্মার রাতে বা দিনে মৃত্যু হলে , আল্লাহ্ তাঁকে কবরের আজাব ও পরীক্ষা হতে নিরাপদে রাখেন ।
— তিরমিজি শরীফ, আহমদ
রমজান মাসে মৃত্যু হলে
হযরত আনাস ইবনে মালেক (রা) বলেছেন , রমজান মাসে কবরে মৃতদের শাস্তি মুলতবি রাখা হয় ।
— বায়হাকি
হযরত আনাস (রা) আরও বলেন ,
রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন, “কোন মুসলমান জুম্মার দিনে ইন্তেকাল করলে তাঁকে কবরের আজাব থেকে নিরাপদে রাখা হয় ।
— শরহে সুদূর , আবু ইয়ালা
মুজাহিদ , শিমান্ত প্রহরী ও শহীদ গনের মর্যাদা
হযরত মিকদাম ইবনে ইয়াক রাব (রা) বলেন , রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন , “ আল্লাহ্ তায়ালার কাছে শহীদ গনের জন্য ছয়টি পুরুস্কার রয়েছে । তা হল –
১) রক্তের প্রথম ফোঁটা পতিত হওয়ার পূর্বেই তাঁকে ক্ষমা করা হয় । আর জান্নাতে তার যে বাসস্থান রয়েছে । তা তাঁকে প্রদর্শন করা হয় ।
২) শহীদ গন কে কবরের আজাব থেকে সম্পূর্ণ নিরাপদ রাখা হবে।
৩) শিঙ্গা ফুঁকের সময় মানুষ যেভাবে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়বে , তাঁরা তা থেকে নিরাপদে থাকবে ।
৪) শহীদ গনের মাথায় সম্মানের প্রতিক স্বরূপ এমন এক মুল্লবান তাজ পরান হবে । যার ইয়াকুত পাথর গুলো দুনিয়া এবং তাতে যা কিছু আছে তার চেয়ে ও মূল্যবান ও উত্তম হবে ।
৫) জান্নাতে তাঁদের সঙ্গিরুপে বাহাত্তর জন অপরুপা হুর প্রদান করা হবে ।
৬) সত্তরজন আত্মীয়ের বেপারে তাঁদের সুপারিশ কে কবুল করা হবে ।
— তিরমিজি শরীফ , ইবনে মাজা
হযরত সালমান ফারসি (রা) বলেন , বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) বলেছেন , “ আল্লাহ্র পথে ইসলামী রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য সীমান্তের প্রহরায় একদিন এক রাত কাটানো , একমাস নফল রোজা এবং এক মাস রাতভর নফল নামাজ আদায় করার চেয়েও উত্তম । প্রহরায় নিয়োজিত ব্যাক্তি যদি প্রহরারত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে , তাহলে সে যে আমল করেছিল , কেয়ামত পর্যন্ত তাঁকে সেই আমলের সওয়াব প্রদান করা হবে এবং শহীদদের ন্যায় তার জীবিকাও চলতে থাকবে, আর সে কবরের আজাব ও পরীক্ষা হতেও নিরাপদ থাকবে ।
— মুসলিম শরীফ
হযরত আবু আইউব (রা) বলেন , রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন, কোন ব্যাক্তি শত্রুর মোকাবেলায় দৃঢ় পদে দণ্ডায়মান থেকে নিহত হলে অথবা জয়ী হলে, তাঁকে কবরের পরীক্ষায় নিপতিত করা হয় না ।
— নাসাঈ শরীফ, তাবারানি ।