ইমাম হুসাইন (রাঃ) এর আকুল আহবান
আল্লাহ্! আল্লাহ্! যখন ইমাম হুসাইন (রাঃ) দেখলেন যে, পানিও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে, তখন তিনি ঘোড়ায় সওয়ার হয়ে ইয়াযীদের সৈন্য বাহিনীর নিকট গেলেন এবং তাদের সামনে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখলেন। তিনি (রাঃ) তাদেরকে একান্ত যুক্তির মাধ্যমে বুঝালেন, ‘জুলুম-অত্যাচার থেকে বিরত থাকো, আমাদের রক্ত দ্বারা তোমাদের হাতকে রঞ্জিত করো না। জেনে শুনে কোন মু’মিনকে কতল বা শহীদ করা মানে জাহান্নামকে নিজের ঠিকানায় পরিণত করা। আমি হলাম তোমাদের রসূল (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর দৌহিত্র; যার কালেমা তোমরা পড়। আর এই মূহুর্তে আমি ছাড়া তোমাদের রসূল (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর অন্য কোন দৌহিত্র নেই। আর আমার সম্পর্কে তোমরা ভালভাবে জানো । আমি ঐ হুসাইন, যার সম্পর্কে রসূলে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন- “হাসান-হুসাইন বেহেশ্তের নওজোয়ানদের সর্দার।” আমি সেই হুসাইন, যখন নিজ মায়ের কোলে ক্রন্দন করতাম, তখন আল্লাহ তায়ালা’র প্রিয় নবী হযরত মুস্তাফা (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলতেন, “ওগো ফাতিমা! ওকে কাঁদায়োনা। কারণ ও কাঁদলে আমার খুবই কষ্ট হয়।” দেখ, যখন আপন মায়ের কোলে আমার কান্নাটা নবীজী (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর জন্য কষ্টদায়ক ছিল, এখন তোমরা যদি আমাকে ভিন দেশে কষ্ট দাও এবং আমার রক্ত দ্বারা তোমাদের হাতকে রঞ্জিত করো, আমার ছেলে মেয়েদেরকে শোকাভিভূত করো, তাহলে চিন্তা করে দেখ, নবীজী (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কী কষ্ট পাবেন! আর যে রসূল (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে কষ্ট দিবে, এর পরিণাম সম্পর্কে তোমরা পবিত্র কুরআন শরীফ-এই পড়েছো-
ان الذين يؤذون الله ورسوله لعنهم الله فى الدنيا والاخرة واعد لهم عذابا مهينا
অর্থ: নিশ্চয়ই যারা আল্লাহ পাক ও তাঁর রসূল (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে কষ্ট দেয়, তাদের প্রতি দুনিয়া ও আখিরাতে আল্লাহ পাকের লা’নত এবং আল্লাহ পাক তাদের জন্য অত্যন্ত কষ্টদায়ক শাস্তির ব্যবস্থা করে রেখেছেন।
যখন তিনি (রাঃ) তাঁকে নির্দোষ প্রমাণ করার উদ্দেশ্যে অকাট্য যুক্তির মাধ্যমে বুঝালেন যে, জুলুম-অত্যাচার থেকে বিরত থাকো এবং আমার রক্ত দ্বারা তোমাদের হাত রঞ্জিত করো না। আমি তোমাদের কোন ক্ষতি করিনি, তোমাদের সন্তানাদি হত্যা করিনি, তোমাদের প্রতি কোন অত্যাচার করিনি। আমিতো কূফাবাসীর আহবানে এসেছি। তারা যখন বিশ্বাসঘাতকতা করলো, আমাকে চলে যেতে দাও। তাঁর হৃদয় বিদারক বক্তব্য ওদের মনে কোন প্রভাব বিস্তার করলো না । ওদের কপালে জাহান্নাম অবধারিত ছিল। তাই ইমাম হুসাইন (রাঃ) এর আকুল আবেদন তাদের মনে কোন রেখাপাত করলো না। বরং তারা হৈ-হুল্লা শুরু করে দিল এবং বলতে লাগলো, আমরা আপনার বক্তৃতা শুনতে আসিনি। হয় ইয়াযীদের বাইয়াত গ্রহণ করুন অথবা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হোন। তিনি বললেন, আমি আমার পক্ষে যা প্রমাণ করার ছিল তা প্রমাণ করলাম। যেন কাল কিয়ামতের মাঠে তোমাদের এ কথাটুকু বলার সুযোগ না থাকে, হে আল্লাহ! আমাদের জানা ছিল না, আমাদেরকে কেউ বুঝায়নি, এখন আর তোমরা খোদার দরবারে এ ধরনের কোন আপত্তি পেশ করতে পারবে না। এখন সব প্রমাণিত হয়ে গেছে। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ ফরমান-
وما كنا معذبين حتى نبعث رسولا
অর্থ: কোন রসূল অর্থাৎ হিদায়েতকারী না পাঠানো পর্যন্ত আমি কাউকে শাস্তি দান করবো না।
যা প্রমাণ করার ছিল তা প্রমাণিত হয়ে গেছে। এখন তোমাদের যা ইচ্ছা তা করো। মুহররমের নয় তারিখ আসলো এবং ইয়াযীদ বাহিনীর মধ্যে আনন্দ-উল্লাস শুরু হয়ে গেল। এটা পূর্ণ যুদ্ধ ঘোষণার পূর্বাভাস ছিল। হযরত ইমাম হুসাইন আলাইহিস সালাম তাঁর এক সঙ্গীকে ওদের কাছে পাঠালেন এবং বললেন, ওদেরকে গিয়ে বলুন, আমাদেরকে যেন একরাত্রি সময় দেয়। ইয়াযীদ বাহিনী এই কথাটি গ্রহণ করলো এবং এক রাত্রির সুযোগ দিলো।
তথ্যসূত্র
- কারবালা প্রান্তরে(লেখকঃ খতিবে পাকিস্তান হযরত মাওলানা মুহাম্মাদ শফী উকাড়বী(রহঃ))