পায়খানা করার নিয়ম
From Sunnipedia
- যেসব পুকুরে বা খালে অজু গোছল করে সেসব পুকুরে বা খালে, কুপে, ফলযুক্ত গাছের নীচে, লোকের ছায়ায় বসার স্থানে, মছজিদে বা তার পাশে, ঈদগাহে, কবর স্থানে, রাস্তায় চলাচলের স্থানে কেবলার দিকে মুখ বা পিঠ ফিরিয়ে পেশাব-পায়খানা করবেন না। করা মাকরুহ।
- মাথায় টুপি রাখুন। অন্যথায় কোন কাপড় দিয়ে মাথা ঢেকে রাখুন। খালি মাথায় কখনো পেশাব পায়খানা করবেন না।কোন কিছু না থাকলে মাথার উপর গাছের পাতা অথবা হাত রাখুন। (ছুন্নাত)
- জুতা ব্যতীত খালি পায়ে পেশাব পায়খানা করবেন না। করা মাকরুহ।
- পুরুষঃ
- ৪/৬টি কুলুখের ঢিলা/ সুতি কাপড়ের টুকরা অথবা টয়লেট পেপার, পানি ভর্তি বদনা ও গামছা বা তোয়ালেসহ পায়খানায় যান। (ছুন্নাত)
- মেয়েঃ
- ৩/৫টি কুলুখের ঢিলা/সুতি কাপড়ের টুকরা অথবা টয়লেট পেপার, পানি ভর্তি বদনা ও গামছা বা তোয়ালে নিন।
- দুধ খাওয়া শিশুর মা হলে তোয়ালে বা গামছা দিয়ে জামা ও শাড়ীর ওপর আলাদাভাবে স্তন দুটো ঢেকে রাখুন যেন দুধের ওপর পেশাব পায়খানার ভাপ না লাগে। ভাপ লাগলে দুধ শুকিয়ে যাবে এবং শত চেষ্টা তদবীরে দুধ ফিরে আসবে না।
- চারিপাশে আড়াল এমন স্থানে বসুন এবং পায়খানায় ঢুকতে প্রথমে বাম পা প্রবেশ করান। (ছুন্নাত)
পায়খানায় ঢুকতে দোয়া পড়ুনঃ
(ছুন্নাত)আল্লাহুম্মা আউযুবিকা মিনাল খুবছি অল খাবায়িছ।
- পাদানিতে প্রথমে বাম পা রাখুন। (ছুন্নাত)
- তৎপর ডান পা রাখুন। (ছুন্নাত)
- কুলুখ ও বদনা ডান পাশে রাখুন। (ছুন্নাত)
- পাকা পায়খানা হলে বসার আগে প্যানের উপর অল্প পানি ঢেলে দিন। শুকনা প্যানের উপর পায়খানা লেগে তা আটকে যায় ও সরতে চায় না। এতে অন্যের অসুবিধা হয়।
- বসার সময় কাপড় উঠান। (ছুন্নাত)
- দাড়ানো অবস্থায় কাপড় উঠাবেন না। উঠানো মাকরুহ।
- দু’হাটু ঢেকে রাখুন। (ফরজ)
- বাম পায়ে ভর দিয়ে বসুন। (মুস্তাহাব)
- বেশী সময় বসে থাকবেন না। অর্শ্ব ও হার্টের রোগ হতে পারে।
- লজ্জাস্থান বিনা কারণে দেখবেন না। দেখলে চোখের জ্যোতি নষ্ট হয়।
- থু থু ফেলবেন না বা নাক ঝাড়বেন না। এরূপ করা মাকরুহ। করলে গ্যাস পেটে যেয়ে পেটের অসুখ হয়।
- পেশাব-পায়খানা ও মিলনের সময় দাঁতে-দাঁত চেপে রাখুন। এ নিয়ম যথারীতি পালন করলে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কোন দাঁত পড়বে না।
- পায়খানার জন্য বেশী জোরে চাপ দিবেন না। অর্শ হতে পারে।
- ঢিলা কুলুখ ব্যবহার করার পূর্বে তিনবার মাটিতে আঘাত করুন।
- পুরুষগণ
- ঢিলা কুলুখ শেষে ডান হাতে বদনা ধরুন। বাম হাতে পানি ঢালুন।
- বাম হাতে পুরুষাঙ্গ দোহন করে পেশাব বের করে ফেলুন। এবার ধুয়ে ফেলুন।
- তারপর বাম হাতের মাঝের আঙ্গুল দিয়ে শৌচ করুন।
- প্রয়োজনে অনামিকা ও কনিষ্ঠা আঙ্গুল ও ব্যবহার করতে পারেন।
- আঙ্গুলের পেট দিয়ে আড়াআড়িভাবে শৌচ করুন।
- আঙ্গুলের নখ লাগাবেন না। লাগালে অর্শ্ব রোগ হতে পারে।
- শৌচ শেষে হাত মাটি বা সাবান দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
- যদি পুরুষাঙ্গ থেকে সম্পুর্ণ পেশাব বের হয়ে থাকে তবে পেশাবের কুলুখ ব্যবহার করা মোস্তাহাব। যদি পেশাব না বেরিয়ে থাকে তবে বাকী একটা কুলুখ পেশাবের জন্যে ব্যবহার করুন। (ছুন্নাত)
- কুলুখ নিয়ে উঠে দাড়ান।
- গামছা বা তোয়ালের একমাথা কাধের ওপর রাখুন। অন্য মাথা হাটুর নিচ পর্যন্ত ছেড়ে দিন।
- এবার হাটা চলা করুন যত সময় পেশাব বের না হয়।
- প্রয়োজনে উঠ বসুন বা গলা খাকরাইতে পারেন।
- লক্ষ্য রাখুনঃ
- চলাফেরার সময় যেন লোকের নজরে খারাপ না লাগে সেদিকে খেয়াল রাখুন।
- এরপর পায়খানায় প্রবেশ করুন।
- পেশাবের জায়গা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
- হাত ধুয়ে ফেলুন।
- এরপর বাইরে আসুন।
- প্রথমে ডান পা ও পরে বাম পা দিন।
- পাকা পায়খানা হলে পানি ঢেলে দিন যেন প্যান থেকে পায়খানা সরে যায়।
- যদি পানি না দেন অন্যের পায়খানা করতে অসুবিধা হলে গোনাহ হবে।
- বেরিয়ে দোয়া পড়ুনঃ পায়খানা হতে বের হওয়ার দোয়া-
‘আলহামদু লিল্লাহিল লাজী আযহাবা আন নিল আযা অ আফানী।’
অর্থঃ সকল প্রশংসা আল্লাহ তাআ’লার জন্য যিনি আমার থেকে কষ্টদায়ক জিনিস বের করে দিয়েছেন এবং আমাকে সুস্থতা দান করেছেন।
- মহিলাগণঃ
- এবার ডান হাতে বদনা ধরুন।
- বাম হাতে পানি ঢালুন।
- বাম হাতের মাঝের আঙ্গুলের পেট দিয়ে আড়াআড়িভাবে শৌচ করুন।
- প্রয়োজনে অনামিকা ও কনিষ্ঠা আঙ্গুল ব্যবহার করতে পারেন।
- আঙ্গুলের নখ না লাগে সেদিকে লক্ষ্য রাখুন। আঙ্গুল লাগলে অর্শ্ব রোগ হতে পারে।
- এবার হাত মাটি অথবা সাবান দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
- এরপর পেশাব করার পরের নিয়ম পালন করুন।
- তারপর পায়খানা থেকে বের হয়ে পায়খানার দোয়া দোয়া পড়ুন।
- পুরুষ/মহিলা বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখুনঃ
- ১। মলদ্বারে পায়খানা এক গোল টাকা পরিমান জায়গার বেশী লাগলে কুলুখের পরেও ধোয়া ফরজ।
- ২। এক টাকা পরিমান জায়গায় লাগলে ধোয়া ওয়াজিব।
- ৩। এর কম পরিমান জায়গায় লাগলে ধোয়া ছুন্নাত।
- ৪। মলদ্বারে যদি না লাগে তবে ধোয়া মোস্তাহাব।
তথ্যসূত্র
- নামাজ প্রশিক্ষণ (লেখকঃ মাহবুবুর রহমান, প্রাক্তন উপাধ্যক্ষ, প্রতাপনগর আবূবকর সিদ্দিক ফাজিল মাদ্রাসা, সাতক্ষীরা)