মুহাম্মাদ (সঃ) নূর সমর্থনে দলিল সমূহ 3
আল্লাহতা’লা এরশাদ ফরমান:
তাঁর (আল্লাহর) আলোর (নূরের) উপমা হলো এমনই যেমন একটা দীপাধার, যার মধ্যে রয়েছে প্রদীপ। ওই প্রদীপ একটা ফানুসের মধ্যে স্থাপিত। ওই ফানুস যেন একটি নক্ষত্র, মুক্তার মতো উজ্জ্বল হয় বরকতময় বৃক্ষ যায়তুন দ্বারা, যা না প্রাচ্যের, না প্রতীচ্যের; এর নিকটবর্তী যে, সেটার তেল প্রজ্জ্বলিত হয়ে ওঠবে যদিও আগুন সেটাকে স্পর্শ না করে; আলোর (নূরের) ওপর আলো (নূর)।
— আল্ কুরআন, ২৪:৩৫
ইমাম সৈয়ুতী (রহ:) তাঁর ’আল রিয়াদ আল আনিকা’ পুস্তকে বলেন,
হযরত ইবনে জুবায়র (রা:) ও হযরত কাআব আল আহবার (রা:) বলেছেন: ‘(আয়াতোক্ত) দ্বিতীয় ’নূর’ দ্বারা মহানবী (দ:)-কে বোঝানো হয়েছে; কেননা আল্লাহর পক্ষ থেকে (আগত) যে জ্ঞানালোক ও সুস্পষ্ট (প্রমাণ), তিনি-ই তার সংবাদ দানকারী, প্রকাশক ও জ্ঞাপণকারী।’ কাআব (রা:) বলেন, ‘এর তেল প্রজ্জ্বলিত-প্রায় হবে, কারণ মহানবী (দ:) মানুষের কাছে পরিচিত-প্রায় হবেন, এমন কি যদি তিনি নবী হিসেবে নিজেকে দাবি না-ও করেন, ঠিক যেমনি ওই তেল আগুন ছাড়াই (প্রজ্জ্বলনের) আলো বিচ্ছুরণ করবে’।
ইবনে কাসির তার ’তাফসীরে কাসির’ কেতাবে ইবনে আতিয়্যা কর্তৃক বর্ণিত হযরত কাআব আল আহবার (রা:)-এর উপরোক্ত আয়াতের (ইয়াকাদু যাইতুহা ইউদিই-ইউ ওয়া লাও লাম তামসাসহু নার) তাফসীর প্রসঙ্গে বলেন,
হুযূর পাক (দ:)-এর নবুয়্যত মানুষের কাছে সুস্পষ্ট, এমন কি যদি তিনি তা ঘোষণা না-ও করেন।
ইমাম কাজী আয়ায (রহ:) নিজ ’শেফা’ গ্রন্থে (ইংরেজি সংস্করণ, ১৩৫ পৃষ্ঠা) বলেন,
নিফতাওয়াই আলোচ্য আয়াত (২৪:৩৫) সম্পর্কে বলেছেন: ‘আল্লাহ তাঁর নবী (দ:)-এর বেলায় এই মিসাল (উপমা) দিয়েছেন। তিনি আয়াতে বুঝিয়েছেন যে মহানবী (দ:)-এর প্রতি কুরআন অবতীর্ণ হবার আগেই তাঁর চেহারা মোবারকে নবুয়্যতের ছাপ ফুটে উঠেছিল, যেমনিভাবে হযরত ইবনে রাওয়াহা (রা:) ব্যক্ত করেছিলেন নিজ কবিতায় -
এমন কি আমাদের কাছে যদি (তাঁর নবুয়্যতের) সুস্পষ্ট চিহ্ন না-ও থাকতো, তাঁর চেহারা মোবারক-ই আপনাদের সে খবর বলে দিতো ।।
উপরোক্ত আয়াতে উদ্ধৃত ‘মাসালু নূরিহী’, অর্থাৎ, ’আল্লাহর নূর (জ্যোতি)-এর উপমা’ বলতে মহানবী (দ:)-কে উদ্দেশ্য হয়েছে বলে যে সকল উলামা অভিমত ব্যক্ত করেছেন, তাঁদের মধ্যে আছেন
- ইবনে জারির তাবারী (তাফসীর ১৮:৯৫),
- ইমাম কাজী আয়ায (শেফা শরীফ),
- আল বাগাবী (মা’আলিমুত্ তানযিল ৫:৬৩),
- আল খাযিন-এর হাশিয়ায়,
- সাঈদ ইবনে হুবাইর ও আল দাহহাক হতে আল খাযিন (তাফসীর ৫:৬৩),
- ইমাম সৈয়ুতী (দুররে মনসুর ৫:৪৯),
- যুরকানী (শরহে মাওয়াহিব ৩:১৭১),
- আল খাফাজী (নাসিম আল রিয়াদ ১:১১০, ২:৪৪৯) প্রমুখ।
আল নিশাপুরী নিজ ’গারাইব আল কুরআন’ (১৮:৯৩) পুস্তকে বলেন,
মহানবী (দ:) নূর (আলো) এবং আলো বিচ্ছুরণকারী প্রদীপ।
মোল্লা আলী কারী তাঁর ’শরহে শিফা’ বইয়ে বলেন,
এর সুস্পষ্ট অর্থ হলো, নূর বলতে মহানবী (দ:)-কে বুঝিয়েছে।